Ray Kalibari Shiva Mandir, Bankati, Paschim Bardhaman
মন্দির ময় অযোধ্যা - বনকাটি
" চার ঘর মিলে একটি পুকুর আর একশো হাত দূরে দূরে ঠাকুর থান "
লোকমুখে এমন কথা আছে। এই আমাদের অযোধ্যা বনকাটি। গড়জঙ্গলের গায়ে গা লাগিয়ে
এই এলাকা।প্রাচীন গোপভূম এর সেনপাহাড়ী পরগণা।
শুধু বনকাটি বললে হবেনা। সে তো অনেক বনকাটি আছে। বন কেটে বসত - সে যে কবেকার কে বলবে। যাই হোক অযোধ্যা - বনকাটি। পানাগড় - মোরগ্রাম হাইওয়ে র উপর ' এগারো মাইল ' বাসস্ট্যান্ডে নেমে টোটো নিয়ে ৩ কিমি পশ্চিমে পাকা রাস্তা ধরে এগুলেই প্রথমে অযোধ্যা। তারপর বনকাটি। মিলেমিশে আছে অযোধ্যা বনকাটি। আলাদা করা মুশকিল। একই রাস্তার উপরে।
এই রাস্তাই চলে গেছে ইছাইঘোষ এর দেউলের পাশ দিয়ে শিবপুর - অজয়ঘাট - মলানদিঘী রাস্তা পর্যন্ত।
তারপর আরও পশ্চিমে।
বনকাটি গ্রামের উত্তরে বেশ নীচু এই এলাকা।পাশেই গড়জঙ্গল থেকে নেমে আসা নালা ' রক্তনালা'। গড়ঘাটা হয়ে পাষাণচণ্ডী বাগানের ভিতর দিয়ে গিয়ে পড়েছে অজয়ে। জলপথেই ব্যবসা বাণিজ্য চলত। বনকাটির প্রাচীন তম এলাকা। অতীত তার সমৃদ্ধির ইতিহাস। নানাবিধ ব্যবসা করছেন কতকগুলি ব্রাহ্মণ পরিবার। পাশাপাশি বাস।
লাক্ষা বা গালা ; কয়লা ; কাঠকয়লা ; নানা বনজ দ্রব্যের।
প্রাচীণ তম পরিবার গুলির অন্যতম ' রায় পরিবার '। যে পরিবারের প্রধান মাননীয় শ্রী অনিল রায় মহাশয় এখনও জীবিত। বয়স ৮০ র কাছাকাছি।অনেক কথার ভাণ্ডারী। বহুজন এসেছেন তাঁর কাছে। এখনও অক্লান্ত ভাবে তাঁদের কাছে অতীত দিনের কথা কাহিনী শোনান।
আমি নিজে বহু মানুষকে নিয়ে গেছি তাঁর কাছে।
একই প্রাঙ্গণে এতগুলি মন্দির ; ভগ্ন প্রাসাদ।
বনকাটি র রায় পরিবারের কালী পূজা অতি বিখ্যাত।
এখানেই নির্মিত হয়েছে এলাকার প্রাচীন তম দুটি শিব মন্দির।
১৭০৪ শকাব্দে। অর্থাৎ ১৭৮২ সাধারনাব্দে। তার প্রায় ৫০ বছর পরে ১৭৫৬-৫৭ তে নির্মিত হয়েছে পূর্বমুখী পাশাপাশি তিনটি বৃহৎ পীড় যুক্ত দেউল মন্দির। সবই শিবমন্দির। পূর্বপুরুষ দের নামে। প্রাচীন কালীমন্দির এর সংস্কার হচ্ছে।
পরে লিখব তার কথা। প্রাচীন এক খেল কদম এর গাছ। কত যে তার বয়েস কে বলবে। পাশেই বিষ্ণুদালান। পূর্বমুখী।
মুখোমুখি দুই অনবদ্য গঠনের শিবমন্দির। হয়তো সে কোন বরানগরের দিদির নির্মান - তাঁর স্বামী র স্মৃতি তে।
পাশেই ভগ্ন প্রাসাদ। সম্ভবত চট্টোপাধ্যায় পরিবারের।
রায় পরিবারের আদি প্রাসাদ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
আছে শুধু কিছুটা প্রাচীন দেওয়াল। দ্বিতল বিষ্ণু দালান সম্পূর্ণত ধ্বংস স্তুপ। পরিষ্কার করানো হচ্ছে।
মূল চাতাল ভূগর্ভে ৬-৭ ফুট নীচে।
সামান্য দূরে আর এক চট্টোপাধ্যায় পরিবারের শিবমন্দির।
আর কিছুটা দক্ষিণে দক্ষিণ মুখী দুর্গাদালান। পশ্চিম মুখী বিষ্ণু দালান। আর উত্তর মুখী জোড়া শিবমন্দির।
সবই আজ ধ্বংস স্তুপ। গাছেরা তাদের শত সহস্র বাহু দিয়ে আগলে ধরে রেখেছে প্রাচীন সেই নির্মান গুলিকে।
আজ এই দুর্গাদালান ; বিষ্ণুদালান ; আর জোড়া শিবমন্দির নিয়ে ই শুধু লিখব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু একটা সামগ্রিক রূপ কে তুলে ধরার জন্যই দীর্ঘ হল।
তারাপদ সাঁতরা মশাই তাঁর পশ্চিম বাংলার ধর্মীয় স্থাপত্য
মন্দির ও মসজিদ পুস্তকে জানাচ্ছেন
রায় পরিবারের এক শাখার শ্রী নন্দকুমার রায় ও শ্রী গঙ্গা রাম রায় ১৭৩৯ শকাব্দে সন ১২২৪ সালে ৫ ই আশ্বিন এই সব মন্দির দালান নির্মান করান। রাজ মিস্ত্রী ছিলেন বনপাশ গ্রামের শ্রী গোলক নাথ রাজ।
প্রতিষ্ঠা লিপির পাঠ " শ্রী শ্রী দুর্গা সকাব্দা ১৭৩৮/ সন ১২২৪ সাল তাং ৫ ই আশ্বিন / শ্রী দুর্গাচরণা পরাঅন শ্রী/ ল শ্রী নন্দকুমার রায় ও শ্রী গঙ্গা / রাম রায় রাজ শ্রী গোলক / নাথ রাজ সাং বোনপাষ। "
Comments
Post a Comment