Mukteshwar Shiva Mandir, Egra, Purba Medinipur
মুক্তেশ্বর শিব মন্দির, পানিপারুল (থানা-- এগরা, মেদিনীপুর)
মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণের এলাকা পার্শ্ববর্তী ওডিশা রাজ্যের সীমান্তবর্তী। দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ-- দীর্ঘ সাড়ে চারশ' বছর। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার সিংহভাগ এলাকা ওডিশার শাসকদের অধীনে ছিল।সেই সময়কালে ওডিশার বহু সম্পন্ন আর সাধারণ পরিবার ওডিশা থেকে মেদিনীপুর জেলায় চলে এসে, এই জেলার স্থায়ী অধিবাসী হয়ে গিয়েছিলেন।
ওডিশার পুরী জেলার এক বর্ধিষ্ণু জনপদ কাঁশবাঁশ গ্রাম। সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগ তখন। জনৈক নারায়ণ দাস মহাপাত্র ছিলেন কাঁশবাঁশ গ্রামে একটি ধনী পরিবারের কর্তা। তিনি সপরিবারে ওডিশা লাগোয়া মেদিনীপুর জেলার শীপুর পরগনায় চলে এসেছিলেন। পাঁচরোল নামের একটি গ্রামে বসবাস শুরু করেন তিনি।
কেউ বলেন, তিনি জাতিতে ছিলেন করণ সম্প্রদায়ভুক্ত। কেউ বলেন, রাজপূত ক্ষত্রিয় ছিলেন তিনি। যাইহোক, মেদিনীপুরে এলেন যখন, জেলা জুড়ে চৈতন্যদেব প্রবর্তিত গৌড়ীয় প্রেমধর্মের প্রবল স্রোত বহমান। তাতে অবগাহন করল তাঁর পরিবার। বৈষ্ণবীয় রীতিতে দেবসেবার প্রচলন করা হল। তিন-তিনটি বড় আকারের মন্দির গড়া হল-- শিখর-দেউল রীতির রাধাবিনোদ মন্দির, দালান-রীতির ষড়ভূজ মন্দির এবং মদনমোহন মন্দির।
শ'-দুই বছর আগের কথা। পাঁচরোল জমিদারি মহালের ভিতরের এক প্রাচীন গ্রাম-- পানিপারুল।সেখানে মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে, মাটির ৭/৮ ফুট নিচে একটি বড় আকারের শিব লিঙ্গ-এর সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু শত চেষ্টাতেও, লিঙ্গবিগ্রহটিকে তুলে আনা সম্ভব হয় না। তখন গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্তে, বিগ্রহটিকে নিজের অবস্থানে রেখেই, পূজার প্রচলন করা হয়। গ্রামবাসীগণই দেবতার নামকরণ করেন-- বাবা মুক্তেশ্বর শিব।
সেসময় জমিদারবংশে ক্ষমতায় ছিলেন জনৈক গোপীমোহন দাস মহাপাত্র। সংবাদ জেনে, জমিদার স্বয়ং আসেন মুক্তেশ্বর-এর দর্শনে। মাটির অস্থায়ী মন্দির বদল করে, জমিদারি কোষাগার থেকে,
বড়সড় একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করে দেন তিনি। আজও সেই মন্দির নিজের মহিমা নিয়ে বিরাজমান।
নিত্যপূজা ছাড়াও, লাগাতার ভক্তদের পূজা লেগেই থাকে মন্দিরে। চৈত্রের শেষ চার-পাঁচ দিন থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে, বিপুল আড়ম্বরে গাজনের আয়োজন হয় এখানে। গ্রামবাসীরাই সমস্ত কর্মকান্ডের ধারক-বাহক। 'শ্রীশ্রী মুক্তেশ্বর সেবাইত ট্রাস্ট ' নামে বিধিবদ্ধ একটি কমিটি আছে সেবাপূজা পরিচালনা এবং মন্দিরর ক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
৪ ফুট উঁচু আর ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের প্রশস্ত পাদপীঠের উপর মন্দিরটি স্থাপিত। শিখর-দেউল রীতিতে নির্মিত ইটের তৈরী পূর্বমুখী মন্দির। মন্দিরের দুটি অংশ-- জগমোহন এবং বিমান বা মূল মন্দির। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ২০ ফুট। বিমানের উচ্চতা আনুমানিক ৬০ ফুট, জগমোহনটির উচ্চতা ৩০ফুট। আড়াই ফুট প্রশস্ত একটি প্রদক্ষিণ-পথ মন্দিরকে বেস্টন করে আছে।
জগমোহনে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে-- মোট পাঁচটি দ্বারপথ। গর্ভগৃহে দ্বারপথ একটিই। ৬টি দ্বারই খিলান-রীতিতে রচিত।
বিমানসৌধের চারদিকের দেওয়ালে 'সপ্ত-রথ' বিভাজন করা। বাঢ় এবং গন্ডীর বিভাজক বরণ্ডটি প্রকট। অপরদিকে, জগমোহন সৌধের উপরের গন্ডী অংশটি ২০টি থাক-এ ঘণনিবদ্ধ পীঢ়-রীতিতে রচিত। দুটি সৌধেরই মাথায় বেঁকি,
আমলক, কলস, ত্রিশূল-দন্ড স্থাপিত। মন্দিরে কোনও অলংকরণ নাই।
পরবর্তীকালে মন্দিরের সামনে সমতল বিশিষ্ট ছাদের একটি ষোড়শ-দ্বারী নাটমন্দির নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের লাগোয়া একটি ভোগঘর এবং কুণ্ডপুকুর অবস্থিত।
Comments
Post a Comment