Maa Chandi Mandir, Tufanganj, Cooch Behar

 





শ্রীশ্রী মাচন্ডী মন্দির(আয়রানী চিতলিয়া)


তুফানগঞ্জ মহকুমার মারুগঞ্জ অঞ্চলের শতাধিক বছর প্রাচীন আয়রনী চিতলিয়া গ্রামে "মাচন্ডী ঠাকুর"  কুচবিহারের প্রাচীন ঐতিহ্য আজও বহন করে চলছে।মহারাজ হরেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে নাজির খগেন্দ্রনারায়ণ প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের অস্তিত্ব না থাকলেও বর্তমান মন্দিরটি পুরনো মন্দির প্রাঙ্গণেই পুনপ্রতিষ্ঠিত।পূর্বে এই গ্রামের নাম ছিল চিতলিয়া দলবাড়ী। চিতলিয়া আসলে একটি  বিল। বর্তমানে গ্রামটি আয়রাণী বা অরুনি নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের লোকজন এই গ্রামটিকে আয়রাণী চিতলিয়া বলে থাকেন বা এই অঞ্চলটি এই নামে পরিচিত। আনুমানিক  ৫০ বিঘা বিশালাকায় এই চিতলিয়া বিলের ঠিক পূর্ব প্রান্তে চন্ডীঠাকুরের মন্দিরের অবস্থান। পূর্বে এই  চিতলিয়া বিলটি দেবত্র ট্রাস্টের অধীনে ছিল। বর্তমানে এটি মৎস্য দপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন।যদিও মন্দিরটি এখনো কুচবিহার দেবত্র ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে আছে ।মন্দিরের নিত্য পূজা,পুরোহিত, দেউড়িদের বেতন দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড বোর্ড এর মাধ্যমে দেওয়া হয় ।


পশ্চিম-মুখী এই চন্ডীঠাকুরের মন্দিরটির ভিত ও ওয়াল পাকা এবং চাল টিন দিয়ে তৈরি। মন্দিরের ভেতরে একটি কাঠের সিংহাসন স্থাপিত ।এই সিংহাসন এর উপর ৮ইঞ্চি (২০সে.মি ) উচ্চতা বিশিষ্ট দ্বিভূজা ও পদ্মাসনে উপবিষ্টা অষ্টধাতুর চন্ডীদেবীর মূর্তি । দেবীর দুদিকে জয়া ও বিজয়ার মূর্তি উপবিষ্টা রয়েছে ।বর্তমান কামরুপী পুরোহিত বিপুল দেবশর্মা(আমাদের  বংশানুক্রমিক পুরোহিত কামাখ্যা দেবশর্মার জ্ঞাতি ) জানান,রাজ আমলের বিশুদ্ধ পঞ্জিকা পাঠ করে এখানে নিত্য পূজা করা হয়। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু তিথি অমাবস্যা,দোল পূর্ণিমা,মকর সংক্রান্তি ,পৌষ সংক্রান্তিতে পূজা হয় ।বাৎসরিক পূজা হিসেবে মাশান ঠাকুরের পূজা হয় ।সাটি মাছ,ঢোঙ্গলে দই চিড়া দিয়েও পূজা হয় । বর্তমানে মন্দির প্রাঙ্গণে এলাকাবাসী বারুনী স্নান উপলক্ষে ছোটখাটো মেলা ও উৎসবের  আয়োজন করেন । লোকোশ্রুতি অনুসারে প্রাচীন এই চন্ডীদেবীর আরাধনায় অনেকে সুফল পেয়েছেন।এলাকাবাসীর মধ্যে চন্ডী ঠাকুরের প্রভাব যথেষ্ট লক্ষ্য করা যায় বা অটুট আছে।দেবতুল্য এই দেবীকে তারা ভক্তিচিত্তে দর্শন করেন।পরিবারের মঙ্গল কামনার্থে অনেকেই দেবীকে "পায়রা" উৎসর্গ করেন।তারা বিশ্বাস করেন চন্ডি মায়ের কাছে মানত করলে সুফল তারা অবশ্যই পাবেন ।


সত্তরের দশকে এলাকাবাসী চিতলিয়া বিলের 

ঘাটে গঙ্গা পূজা ও গঙ্গাস্নানের ব্যবস্থা করেন। তারা বিশ্বাস করতেন তাদের এই স্নান গঙ্গাস্নানের মতই পবিত্র। বর্তমানে এখানে বারুণী স্নান প্রচলিত। 


মন্দির পরিচালনার জন্য পুরোহিত থাকলেও বর্তমান দেউড়ি বিদ্যুৎ ঝা তিনমাসের জন্য অস্থায়ীভাবে এখানে এসেছেন। সর্বক্ষণের জন্য একজন কেয়ারটেকার ও মন্দির চত্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একজন ঝাড়ুদার থাকার কথা। প্রয়োজনীয় কর্মচারী না থাকার জন্য চরম অচলাবস্থা শুরু হয়েছে এই রাজ আমলের মন্দিরটিতে।নিত্য পূজার অর্থ দেবত্র ট্রাস্ট থেকে বরাদ্দ হলেও,অর্থসঙ্কটের মাঝে মাঝে ভক্তবৃন্দের প্রণামির টাকায় চন্ডীদেবীর অন্নের যোগান হয় । 


ইতিপূর্বে প্রায় ২০ বিঘা এলাকাজুড়ে মন্দিরের জায়গা থাকলেও বর্তমানে বেদখল হতে হতে জায়গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০থেকে ১১ বিঘা ।মন্দিরের প্রাঙ্গণে রয়েছে প্রাচীন আম, হরতকি,শালগাছ,রয়েছে বাঁশের বাগান। রয়েছে প্রাচীন অব্যবহৃত কুয়ো।অবিলম্বে মন্দিরের এলাকাটুকু পাকা ওয়াল দিয়ে না ঘিরে ফেললে অবশিষ্ট জমিটুকু থাকবে কিনা সন্দেহ জাগে ।সেইসঙ্গে সব থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ মন্দির এবং মন্দির প্রাঙ্গনের যে জরাজীর্ণ এবং অচলাবস্থা সে গুলোকে দূর করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার,মন্দিরের সংস্কার,রান্নাঘর, বিশ্রামাগার সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। না, হলে চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে যাবে ইতিহাস বিজড়িত এই ঐতিহ্যবাহী মন্দির। পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে,নয়তো প্রাচীন এই মন্দির লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাবে এবং হয়তো বা কোনো একদিন ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে।সরকারিভাবে দেবত্র  ট্রাস্ট এর দায়িত্ব থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ,সংরক্ষণ,পরিচর্যার আন্তরিকতার  অভাব প্রকট ।



Comments

Popular posts from this blog

Ram Sita Coin from Akbar's Era

Jagannath Mandir, Mirgoda, Purba Medinipur

Manasa Mangal Kavya