Mukteshwar Shiva Mandir, Cooch Behar
মুক্তেশ্বর শিবমন্দির
ইতিহাস সমৃদ্ধ কুচবিহার জেলা়য় প্রাচীন নিদর্শন বা পুরাকীর্তি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে সন্ধান করলেই মিলবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শৈব ভূমি বলে খ্যাত এই ভূখণ্ডে নিশ্চিতভাবে দেবালয় নির্মাণের ক্ষেত্রে শিব মন্দিরের সংখ্যা অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় সংখ্যায় অধিক তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
কুচবিহার সদর থানার ১নং ব্লক মোয়ামারি অঞ্চলের সিঙ্গিজানি ময়নাগুড়ি, দেওতাপাড়া গ্রামে প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন এই মুক্তেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দিরের নির্মাণ শৈলী এবং টেরাকোটা কারুকার্য অনেকটা ধলুয়াবাড়ি সিদ্ধনাথ শিব মন্দিরের সঙ্গে সাদৃশ্য। দক্ষিণমুখি এই শিব মন্দিরে প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য জানা না গেলেও আনুমানিক ৫০০বছর আগে বা তার পূর্বে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।আবার উক্ত এলাকার বাসিন্দাদের মতে মহারাজা কান্তেশ্বর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকারের ইট এবং ছাপ থেকে অনেকটাই অনুমেয় চতুষ্কোণ গম্বুজযুক্ত নির্মাণশৈলীর এই মন্দির চতুর্দশ শতকে নির্মিত হয়।
মন্দির কমিটির সম্পাদক অঙ্গেশ্বর বর্মন বলেন,এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে ২২ কাটা জায়গা এবং সঙ্গে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর।
মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিবলিঙ্গ ও দেবী চণ্ডী। নিত্য পূজা হয় বাবা মহাদেব এবং চন্ডী দেবীর। পূজা করেন স্থানীয় মানুষ। রয়েছে একটি নারায়ণ মূর্তি, মূর্তির সঙ্গেই রয়েছে হনুমান, স্বর্গের অপ্সরা, হরিণ্যকুসভ অবতার (বর্তমানে নারায়ণ মূর্তিটি মন্দিরের গর্ভগৃহে থাকেনা,পার্শ্ববর্তী এক বর্মন বাড়িতে মূর্তিটি রাখা আছে এবং সেখানেই এর পুজো দেওয়া হয় নিয়মিত)। এছাড়াও এখানকার পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব আদিশক্তির জপ করা হয় এবং তান্ত্রিক শক্তির বলিদানের মাধ্যমে আরাধনা করা হয়। ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রি উপলক্ষে দুইদিন মেলা বসে। ভক্তসমাগম হয় প্রচুর।বিভিন্ন জায়গা থেকে পুণ্যার্থীরা এসে বাবা মহাদেবের কাছে মানত করেন এবং মানত সম্পন্ন হলে ভক্তি সহকারে পুজো দেন। এছাড়াও এখানে দুর্গাপূজা ,হালযাত্রা, মাশান পূজা, লক্ষ্মী পূজা, মদন কামের বাঁশপূজা, কালী পূজা হয়।
এছাড়া এতত এলাকা এলাকাবাসীরা বলেন, কুচবিহার রাজবংশের মহারাজারা বিভিন্ন সময়ে এখানে এসে মন্দির সংস্কার এবং পূজা নিবেদন করেছেন। তারা আরো বলেন, মহারাজ নৃপেন্দ্র নারায়ণ এবং মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়নকে তাদের পূর্বপুরুষেরা এই মন্দিরে আগমন স্বচক্ষে দেখেছিলেন।
জেলা সদরের সন্নিকটে প্রাচীন এই মন্দিরটি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও এটি প্রাচীন সংস্কৃতির ও অতীত ইতিহাসের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
Comments
Post a Comment