Shanteshwar/Shandeshwar Shiva Mandir, Tufanganj, Cooch Behar



ষন্ডেশ্বর শিবমন্দির বা ছোট মহাদেব

নাককাটি গাছ, তুফানগঞ্জ 

কুচবিহার রাজ পরিবারের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক মন্দিরগুলি আজও শতাধিক প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসকে অক্ষুন্ন রেখে ভক্ত প্রাণ মানুষের মনে চিরস্থায়ী বিরাজমান। তুফানগঞ্জ মহকুমা শহর থেকে ৩১নং কুচবিহার-আসাম জাতীয় সড়ক ধরে ৮কিমি দক্ষিণ পশ্চিম দিকে নাককাটি গাছ গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুচবিহার জেলার অন্যতম পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন  এই ষন্ডেশ্বর শিব মন্দির বা ছোট মহাদেবের ধাম  ।কুচবিহারের প্রথম ইতিহাস রচয়িতা মুন্সি জয়নাথ ঘোষ তার  "রাজোপাখ্যান"গ্রন্থে এখানকার শিবকে "ষন্ডেশ্বর শিব"রূপে বর্ণনা করেছেন। কুচবিহার রাজবংশের উপাস্য দেবতাও শিব। নাককাটি গাছের ষন্ডেশ্বর শিব আজও কুচবিহার রাজবংশের প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। লোকশ্রুতি অনুযায়ী জানা যায়,কুচবিহারের দ্বিতীয় মহারাজা নরনারায়ণের ভ্রাতা শুক্লধ্বজ  বা চিলারায় এই ছোট শিবের  প্রতিষ্ঠাতা‌ এবং তিনি শিব মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করে একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। রাজোপাখ্যান গ্রন্থ থেকে জানা যায়,মহারাজ প্রাণ নারায়ন(১৬৩২-১৬৬৫)এই মন্দির সংস্কার করেছিলেন। নাজির দেও খগেন্দ্রনারায়ন ও এই মন্দির সংস্কার করেছিলেন। প্রাচীন এই মন্দিরটি বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। ১৩০৪বঙ্গাব্দ,১৮৯৭ইং এর ভূমিকম্পে মূল মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। নতুন করে নির্মাণ করা বর্তমান পশ্চিমমুখী চারচালা টিনের পাকা দেওয়াল বিশিষ্ট  মন্দিরটির পিছনে প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে।এই ধ্বংসস্তূপের ভগ্নাংশগুলি প্রাচীনত্ব স্মৃতি বহন করে চলেছে,অনেক কৌতুহলী পর্যটক,ইতিহাসবিদ,গবেষক আজও ছুটে আসেন ধ্বংসস্তূপ দেখতে।বর্তমানে ছোট মহাদেবের শিব মন্দিরটি ছয় বিঘা জমির উপর অবস্থিত ।

বর্তমানে ষন্ডেশ্বর বা ছোট মহাদেবের নিত্য পূজা হয়। পশ্চিমমুখী মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে কাঠের সিংহাসনের উপর অষ্টধাতুর তিনটি শিবলিঙ্গ ,ভৈরব মূর্তি ও নারায়ন শাল গ্রাম শিলা আছে। একটি অদ্ভুত ধরনের শঙ্খ ও আছে। নিত্যপূজা ছাড়াও এখানে অম্বুবাচী দোল সওয়ারী এবং শিবরাত্রিতে বিশেষ পূজা হয়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এখানে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে ।শিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে দুই দিনের মেলা বসে। পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন।দেবত্র ট্রাস্ট পরিচালিত ষন্ডেশ্বর  শিব মন্দিরের ঠিক পশ্চিম প্রান্তে দিঘি আছে ।১৯০৩ সালে একটি ইদারা স্থাপিত করা হয়,সংস্কারের অভাবে আজ ব্যবহার অযোগ্য হয়ে উঠেছে  ।মন্দির প্রাঙ্গনের উত্তর পাশে আছে ভোগঘর এবং টিনের যাত্রী ঘর ।মূল মন্দিরের গাঘেঁষে খোলা জায়গায় উত্তর পাশে আছে বারোঘারিয়া মাসান ।ভক্তগণ আটিয়া কলা, চিড়া ,গুড় দিয়ে  পূজা দেন ।বহু পুরনো বেল, তমাল, নারকেল ,তাল গাছ আছে মন্দির প্রাঙ্গণে ।

নাককাটি গাছের এই ষন্ডেশ্বর শিব মন্দির কুচবিহার রাজবংশের তৈরি শুধু একটি প্রাচীন মন্দির নয়,এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ।রাজবংশের কুলদেবতা শিব আজ সকল মানুষের অন্তরে ধর্মীয় বিশ্বাসের বাতাবরণ এবং প্রভাব ফেলেছে । বাৎসরিক অনুদান ছাড়া দেবত্র ট্রাস্ট মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের দিকে নজর দেয় না।সর্বক্ষণের নজরদারি না থাকার ফলে হয়তো একদিন এই ধ্বংসাবশেষের অনেকটা অংশই অদৃশ্য হয়ে যাবে ।এই বিষয়ে প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ।



Comments

Popular posts from this blog

Ram Sita Coin from Akbar's Era

Jagannath Mandir, Mirgoda, Purba Medinipur

Manasa Mangal Kavya